বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:০১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আজ (৬ ডিসেম্বর) শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল হানাদার মুক্ত হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন সকাল ১০টায় একটি র্যালি বের হয়।
র্যালিটি উপজেলা প্রাঙ্গণ থেকে ভাড়াউড়া বধ্যভূমিতে গিয়ে শেষ হয়। এসময় স্মৃতিস্তম্বে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নজরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্বারা মরণপন লড়াই করে হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে শত্রুমুক্ত করেছিল শ্রীমঙ্গল। তবে এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্বা।
এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে শ্রীমঙ্গলের নিরীহ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শত শত চা শ্রমিককেও হত্যা করে পাক বাহিনী। এসব হত্যাকান্ডের নীরব সাক্ষী শ্রীমঙ্গলের পাঁচটি বধ্যভূমি মধ্যে চারটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর তৎকালীন সংসদ সদস্য আলতাফুর রহমান, কমান্ডার মানিক চৌধুরী ও ফরিদ আহম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। ২৩ মার্চ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সামনে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার রক্তস্নাত পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে ৬ ডিসেম্বর শহরের ভানুগাছ সড়ক দিয়ে আবারও পৌরসভা চত্বরে প্রবেশ করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেন তারা।
এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে সেদিন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল এ অঞ্চলের নিরীহ চা শ্রমিকরা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক পর্যায়ে ৩০ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী নির্মম ভাবে গণহত্যা চালায় তাদের উপর। যুদ্ধের ব্যাংকার বানানোর কথা বলে শহর সংলগ্ন ভাড়াউড়া চা বাগানে প্রবেশ করে সেখানে এক সাথে ৫৫ জন চা শ্রমিককে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে তাদের উপর গুলি চালায় পাক বাহিনী। সেদিন সম্মুখ যুদ্ধ করে মুক্তির স্বাদ নিয়ে আজও বেঁচে আছেন চা শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা পরাগ বাড়ই।
উপজেলার পাঁচটি বধ্যভূমির মধ্যে অন্যতম ভাড়াউড়া বধ্যভূমিতে ১৯৯৭ সালে একটি স্মৃতিস্তম্ব গড়ে তোলা হলেও আজও পূর্ণতা পায়নি। কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বধ্যভূমির যায়গা বেদখল হতে চলেছে।
অপরদিকে, সাধু বাবার বটতলী হিসাবে পরিচিত বধ্যভূমিটি সম্প্রতি সংস্কার করে ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামে গড়ে তোলা হলেও এর কেন্দ্রবিন্দু সাধুবাবার বটতলী বিজিবি ক্যাম্পের সিমানা প্রাচিরের ভেতরে থাকায় সেখানে বিশেষ দিবসগুলোতে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারে না।
এর বধ্যভূমির পাশে চা বাগানের ছড়ার উপর একটি দৃষ্টি নন্দন স্মৃতিস্তম্ব নির্মান করা হয়েছে। মূলত, এটি বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। শহরের পূর্বাশা আবাসিক এলাকার বধ্যভূমিটির যায়গা বেধখল হয়ে গেছে আরো আগেই। সেখানে নাম মাত্র একটি স্মৃতিস্তম্ব থাকলেও সেটি এখন বাসা বাড়ীর দেয়ালের মাঝখানে। এলাকার অনেকেই জানেন না এটি মুত্তিযুদ্ধকালীন একটি গণকবর। একই দশা শহরের ওয়াপদা রেষ্ট হাউজ সংলগ্ন বধ্যভূমির।
এদিকে উপজেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমিটি রয়েছে সিন্ধুরখান ইউনিয়নে। এলাকাবাসী জানান, যুদ্ধের সময়ে সেখানে শত শত নিরীহ মানুষদের হত্যা করে ফেলে রাখা হতো এই বধ্যভূমিতে। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর ধরে বড় এ বধ্যভূমিটি অবহেলায় পড়ে ছিল। অবশেষে, গত মাসের ২২ নভেম্বর স্থানীয় প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধাদের নিয়ে বীর শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ব নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের তথ্য ও চিত্র সংগ্রাহক বিকুল চক্রবর্তী বলেন, শ্রীমঙ্গলের প্রত্যেকটি বধ্যভূমি চরম অবহেলার মধ্যে পড়ে আছে । আমি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে তাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্যাধী সংগ্রহ করে প্রতি বছর নতুন প্রজন্মদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার এবং তাদের ভিতরে স্বাধীনতার চেতনা জাগানোর জন্য এলাকায় প্রদর্শনের আয়োজন করে আসছেন। এসময় তিনি শ্রীমঙ্গলের অবহেলিত বধ্যভূমিগুলি যেন সরকার অতিদ্রুত সংস্কার করেন সেই দাবি জানান।